এম.আর মাহমুদ

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি বিষয় ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে বিষয়টি টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে হাইকোর্ট রং হেডড হিসেবে চি‎ি‎হ্নত করেছেন। একই সাথে টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার অশালীন আচরণকে মাস্তানের ভাষার চেয়েও খারাপ বলে উল্লেখ করেছেন। একই সাথে রাষ্ট্র পক্ষ ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানতে চেয়েছেন। বিষয়টি দেখে খুবই খারাপ লেগেছে। কারণ একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্র্তা এমন আচরণ কিভাবে করতে পারে সকলেরই প্রশ্ন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আমাদের দেশের সুশিক্ষিত সন্তানেরা বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পেয়ে সুচারুভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য বড়ই সৌভাগ্য। তবে হতাশ হই কিছু সংখ্যক ওই সমস্ত সরকারি কর্মকর্তার আচরণে। সরকারি কর্মকর্তারা হচ্ছেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী মাত্র। এদেশের সব শ্রেণির মানুষের করের টাকায় তারা মাশুহারা পেয়ে থাকে। কালে ভাদ্রে কিছু কিছু সরকারি কর্মকর্তার আচরণ দেখে মনে হয় তারাই যেন দেশের প্রভু। গণতান্ত্রিক দেশের কর্মকর্তাদের আচরণ যখন প্রভুসূলভ হয়, তখন বলতে ইচ্ছে করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কেন দেশটি স্বাধীন করেছে। আবার এটাও বলতে হয় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন না হলে এদেশের অনেকেই সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে চাকুরী পেতেনে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। দেশ স্বাধীন না হলে পাকিস্তানীদের ঊর্দূ ভাষায় অশ্লীল গালি শুনতে হতো। তবে এখন মাতৃভাষায় সে ধরণের গালি শুনতে হচ্ছে।

প্রসঙ্গক্রমে না বললে হয় না- একজন সংবাদকর্মী টেকনাফে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রদত্ত হতদরিদ্রদের মাঝে উপহার দেয়া ঘরগুলো বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে মর্মে অনলাইন পোর্টালে সংবাদ প্রকাশ করেছেন। এ কারণেই টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্র্মকর্তা ওই সংবাদকর্মীকে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করেছেন। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি একজন বিজ্ঞ আইনজীবী হাইকোর্টের নজরে আনলে ওই নির্বাহী কর্মকর্তার অশ্লীল গাালাগালিকে মাস্তানের ভাষা হিসেবে অবহিত করেছেন। একই সাথে বলেছেন, তিনি রং হেডেড। আমার সাংবাদিকতা জীবনে এ ধরণের দু’বারই শুনেছি। হয়তো রাষ্ট্র ওই কর্মকর্তাকে স্বীয় পদ থেকে সরিয়ে অন্যপদে পদায়ন করবেন। এর বেশি আর কি হবে? যাক! তারপরও এ ধারণের উচ্চ আদালতের দৃষ্টান্তমূলক একটি বাক্যই জাতির জন্য মঙ্গলজনক। তবে উচ্চ আদালতের এমন মনোভাব থেকে হয়তো অনেক সরকারি কর্মকর্তা শিক্ষা নেবেন। এ প্রসঙ্গে আর বেশি বলতে যাব না। কারণ বিষয়টি আর সীমাবদ্ধ নেই। উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। সাংবাদিকতার জীবনের শুরুতে যে হোঁচট খেয়েছি। তা থেকে অনেক শিখেছি। এখনও ওই ঘটনাটি বার বার মনে পড়ে। আমার সাংবাদিকতা শুরু লামা মহকুমা থেকে। প্রায় সময় নিজ বাড়ি থেকে নৌপথে চকরিয়া থেকে লামায় যাতায়াত করতাম। বেশিরভাগ সরকারি কর্র্মকর্তা অল্প বয়সে সাংবাদিকতা করলেও খুবই স্নেহ করত। লামা মহকুমার সর্বশেষ মহকুমা প্রশাসক ছিলেন (এসডিও) শহীদুল্লাহ। তিনি রাঙ্গামাটি থেকে প্রকাশিত দৈনিক গিরি দর্পণের প্রথম পৃষ্ঠার একটি সংবাদ নিয়ে খুব অস্বস্তিতে ছিলেন। সংবাদের শিরোনাম ছিল ‘লামায় সেলিব্রাল ম্যালেরিয়ায় শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে দাপন করতে ব্যয় হচ্ছে প্রতিদিন অর্ধলাখ টাকা’ সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পর হয়তো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জবাবদিহীর কারণে তিনি ছিলেন মহাবিরক্তে। এরই মধ্যে আমি সালাম দিয়ে অফিসে প্রবেশ করতেই তিনি রাগান্বিতস্বরে বলে বসলেন, “চেয়ারে বস। আমি বসতেই জানতে চাইলেন, গিরি দর্র্পণে কে লিখেন? আমি বললাম রুহুল আমিন নামের এক ছোট ভাই এক পত্রিকায় লিখেন। এটুকু শোনার পরই তিনি কাল বিলম্ব না করে লামা থানার ওসিকে ল্যান্ডফোনে নির্র্দেশ দিলেন রুহুল আমিনকে নিয়ে এসডিও সাহেবের অফিসে আসতে। অল্প সময়ের মধ্যেই থানা পুলিশ রুহুল আমিনকে বাজার থেকে একজন দারোগা নিয়ে আসলেন, এসডিও সাহেবের অফিসে। রুহুল আমিনকে দেখেই এসডিও সাহেব তেলেবেগুনে জলে উঠলেন এবং জানতে চাইলেন সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোন কর্মকর্তার বক্তব্য নেয়া হয়েছে কিনা? রুহুল আমিন ভয়ে অনেকটা চুপ ছিলেন। তখন আমি বললাম, স্যার লামায় কি ম্যালেরিয়ায় মানুষ মারা যাচ্ছে না? তখন এসডিও সাহেব একটু নমনীয় হয়ে বললেন, এ সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে ঊর্র্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বকুনিতে আমি অস্থির। আমি পারছি না মরুভূমির উটপাখির মতো মাথা বালিতে গুজিয়ে রাখতে। পরে লামার সংবাদকর্মী রুহুল আমিনের উপর খুবই রাগান্বিত হলেও কোন ধরণের অশালীন আচরণ করেনি। যা করেছে তা ছিল রাগের মাথায় শিক্ষণীয় কথাবার্তা। পরে তিনি ওই সংবাদের ব্যাখ্যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় আমি ও রুহুল আমিনকে সহকারী কমিশনার শফিকুল ইসলামের কাছে পাঠিয়ে দিলেন এবং চা-নাস্তÍার ব্যবস্থা করতেও বলে দিয়েছেন।

অপরদিকে চকরিয়া প্রেসক্লাবের একটি অনুষ্ঠানে চকরিয়া উপজেলার প্রথম নির্র্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান সাহেব বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছিলেন, সে সময়ের শীর্ষ একটি দৈনিকে সংবাদ শিরোনাম ছিল “মেঘনায় লঞ্চ ডুবি শত শত লাশ ভাসছে পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে লাশ উদ্ধার করতে গিয়ে দেখা গেল ওই লঞ্চে কোন মানুষই ছিল না। লঞ্চটি ছিল কাঁঠাল ভর্তি। মেঘনার বক্ষে ভাসছিল কাঁঠাল। হয়তো ওই সাংবাদিক মনে করেছিল লঞ্চের যাত্রীগুলো মরে ভাসছিল। দায়িত্বশীল কর্র্মকর্র্তারা এসব কথাগুলো উপহাসের শুরু বললেও শিখার ছিল অনেক কিছু। কিন্তু আজ অনেক ক্ষেত্রে আমরা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনে যেমন ব্যর্থ তেমনি সরকারি কর্মকর্র্তারাও চরম উদাসীন। যাব কোথায়? অতএব সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে আমরা যতœবান না হলে এ ধরণের অশালীন আচরণ শুনতেই হবে। ##